চাকরির প্রলোভনে যেভাবে তরুণীদের ফাঁসান প্রকৌশলী জামানুর

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান নিজের যৌন আকাক্সক্ষা মেটাতে চাকরির প্রলোভনে তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসান বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে নানা অপবাদ দিয়ে হেনস্তা এমনকি ক্ষমতার অপব্যহার করে তরুণীদের পাগল সাজিয়ে জোরপূর্বক পাগলাগারদে পাঠানোর মতো অভিযোগও আছে জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রকৌশলী জামানুর রহমান এক তরুণীকে পাগল অপবাদে ভর্তি করিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে। ভাগ্যের জোরে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও ওই তরুণীর দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে।

ভুক্তভোগী ওই তরুণীর অভিযোগ, জামানুরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় শিকার হয়েছেন নির্যাতনের, দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে পাবনা মানসিক হাসপাতালে। অজ্ঞাত ফোন কল পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামী। এরপর পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মেলে।

আদালতে তরুণীর দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে, দীর্ঘদিন কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী জামানুর রহমান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরি বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। পাশাপাশি চাকরি দেওয়ার নামে কীভাবে তরুণীদের ফাঁসাতেন নিজের জালে।

ভুক্তভোগী তরুণী যুগান্তরকে বলেন, জামানুর রহমানের কাছে চাকরির জন্য গেলে তিনি বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখান। এমনকি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীও তার খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানান তিনি। তাকে যা বলবে তাই প্রধান প্রকৌশলী করবেন বলে জানান জামানুর রহমান। তার কাছে একটা চাকরি দেওয়া তো সামন্য একটা ব্যাপার। যেন আমার চাকরি হয়েই গেছে। এরপর একপর্যায়ে প্রকৌশলী জামানুর আমাকে বলেন, ‘এমনি এমনি এ জগতে কেউ কাউকে কিছুই দেয় না চাকরি তো দূরের কথা। কিছু পাইতে হলে কিছু দিতে হয়।’ জামানুর রহমানের এমন মন্তব্যের পর তরুণী প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে পিছু হটতে শুরু করলেই তার জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার।

ভুক্তভোগী ওই তরুণীর স্বামী জানান, ফেনী থেকে একটা ফোনকল আসে এবং অপর প্রান্ত থেকে আমার স্ত্রীর নাম করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বলেন, তিনি পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরপরই আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই এবং আদালতের নির্দেশে আমার স্ত্রীকে মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্ত করি।

তিনি বলেন, তাদের অনেক টাকা এবং লোকজন আছে। তাই আমরা জীবন ও সম্মান রক্ষার্থে আত্মগোপনে আছি। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছে, এখন বেঁচে থাকতে চাই।

এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী বরাবরে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত এক অভিযোগে দেখা যায়, তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগের ২০ নম্বর দফায় জামানুর রহমানের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানকে চাকরিতে নিয়োগের প্রার্থী জোগান দেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় এক তরুণীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন সম্মানহানির পর তাকে চাকরি দিতে না পারায় ভুক্তভোগী তরুণী মুখ খুলতে পারে এমন ভয় থেকে তরুণীকে প্রথমে শিকলবন্দি করে আটকে রাখে এবং পরে পাগল অপবাদে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান।

বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তেও উঠে এসেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসানোর ঘটনাটি শিহরিত হয়ে ওঠার মতো। এমনকি প্রকৌশলী জামানুর রহমান তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নষ্ট করতে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে তাকে মানসিক রোগী সাজিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী জামানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পরে রং নাম্বার বলে প্রথমে ফোন কেটে দেন। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৭১১-৯৭২৯৭৭ এ কল করলে অপর প্রান্ত থেকে জানান উনি বাহিরে আছেন পরে কল দেবে বলে সংযোগটি বিছিন্ন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *